আমার ক্লাসের বন্ধু ও শিক্ষকরা
সরকারি মুসলিম হাই স্কুল আমাকে শক্তি দিয়েছে, সাহস দিয়েছে সামনে এগিয় যাবার জন্যে। বিশেষ করে নবম ও দশম শ্রেনীতে আমাদেরকে এস এস সি বা স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষার জন্যে যে ভাবে প্রস্তুত করেছিলো তা কোনদিনই ভুলবার নয়। আমার সে প্রস্তুতি জীবনের পরর্বতি সমস্ত পরীক্ষায় কাজে দিয়েছে। তখনকার সময় প্রথম বিভাগে পাশ করাটা ছিলো একটা বিরাট ব্যাপার। এখনকার মতো সবাই গোল্ডেন এ পেত না। পাশ ও করতো অর্ধেকের মতো ছাত্রছাত্রী। বাকীরা অকৃতকার্য হতো। আর যারা প্রথম বিভাগে পাশ করতো তারা সত্যিকারের মেধাবী ছাত্র ছিলো। প্রত্যেক স্কুল চাইতো তাদের স্কুল হতে বেশী সংখ্যক ছাত্র প্রথম বিভাগে পাশ করুক।বেশীরভাগ স্কুল হতে প্রথম বিভাগ কেউ পেত না । পেলেও একদুই জন সে বিভাগে উত্তীর্ন হতো। ষাট দশকে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের সাথেই মুসলিম হাই স্কুলের প্রতিযোগিতা হতো। প্রচণ্ড রেষারেষি ছিলো। এ দুই স্কুল হতেই বেশী সংখ্যক ছাত্র প্রথম বিভাগে পাশ করতো। পরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রেও আমরা মুসলিম হাই স্কুলের ছাত্ররা কলেজিয়েট স্কুলে বসে এস এস সি পরীক্ষা দিতাম আর সে স্কুলের ছাত্ররা মুসলিম হাই স্কুলে আসতো। সে সময় দশ বিষয়ে মোট এক হাজার নম্বরের পরীক্ষা হতো। তারমধ্যে ৬০০ নম্বর পেলেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন বলে ধরা হতো। বিজ্ঞান বিভাগে আমাদের হিসাব ছিলো দুই অংক বিষয়ে ২০০ তে ২০০ এবং ইংরেজি ও বাংলার গ্রামারে ৩০ করে মোট ৬০ নম্বরের পুরো নম্বর পেতেই হবে। সে হিসাবে ৬০০ নম্বরের মধ্যে আমরা ২৬০ নম্বর আগে ভাগেই যোগ করে প্রথম বিভাগ পাবার হিসাব করতাম।ব্যাকারন এমন ভাবে শিখেছিলাম যে এখনো সে বাংলার কারক, সমাস, সন্ধি বা ইংরেজি ব্যাকারন আমার মুখস্থ রয়ে গেছে।

১৯৬৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে আমরা দশজন এ স্কুল হতে প্রথম বিভাগে এস এস সি পরিক্ষায় প্রথম বিভাগ পেয়ে পাশ করেছিলাম।অনেকেই দুই থেকে ৪টা বিষয়ে লেটার মার্কস (৮০%)পেয়েছিলো। পুরো কুমিল্লা বোর্ডে ( চট্টগ্রাম বিভাগ) একসাথে এতজন প্রথম বিভাগ পাওয়া খুবই কম স্কুলের কপালে জুটতো। এ সরকারি মুসলিম হাই স্কুল আমাদের জীবনের ভিত এমন শক্ত করে দিয়েছিলো যে পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের আর পেছনে তাকাতে হয় নি। বাংলাদেশের যেখানেই আমরা পড়েছি সাফল্য আমাদের কাছে ধরা দিয়েছে।যার ফলে পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক বা ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় কেউ না ফসকে পড়ে সবাই ভালো ভাবে উত্তীর্ন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্যে তৈরী হয়ে গেলাম। ষাট দশকে চাকুরী ও সামাজিক বিবেচনায় ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটা একটা বিরাট ব্যাপার ছিলো। দেশের প্রচুর মেগাপ্রজেক্ট বা অবকাঠামো নির্মানের কাজ চলছিলো । ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খানের আমলে ( ১৯৫৮ -১৯৬৮) দেশের এ অঞ্চলে সত্যিকার ভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন হয়। গঙ্গা কপোদাক্ষা প্রজেক্ট, চন্দ্রঘোনার দাউদের কাগজের মিল, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, আমিন জুট মিল, গ্রামের আনাচেকানাচে রাস্তাঘাট,ব্রীজ কার্লভাট নির্মান চলছিলো। সেই সাথে চট্টগ্রাম শহরকে ঢেলে সাজানো এবং এর আশেপাশে নতুন শিল্প এলাকায় অজস্র কলকারখানা গড়ে উঠছিলো। সে সময় চাহিদার তুলনায় ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা ছিলো অপ্রতুল। এ পেশায় আকৃষ্ট করার জন্যে সরকারের বেতনের দিক দিয়েও ডাক্তার বা আমলাদের চেয়ে ও ইঞ্জিনিয়াররা বেশী বেতন বেশী ছিলো।
সেই সময়কার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষিতে চাকুরী ও ভালো বেতনের নিশ্চয়তায় সাধারণত প্রায় সব মেধাবী ছাত্ররাই স্কুলের নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ নিতো যাতে পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়তে পারে। আর তৎকালিন পুর্ব পাকিস্তানে একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়্টা ছিলো ঢাকায় যেখানে সবাই পড়ার চেষ্টা করতো। তাই প্রতিযোগিতাও ছিলো প্রচন্ড। চারশ টির মতো আসন ছিলো সেখানে। রাজশাহীতে আর একটা মাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিলো যেখানে ১২০ জন ছাত্র ভর্তি করাতো। মুসলিম হাই স্কুল হতে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগ পাওয়া দশ জনের মধ্যে আমরা ৩ জন তখনকার দিনের স্বপ্নের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (পুর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়্)বা এখনকার বুয়েটে পড়ার সুযোগ পাই। পরে এ বুয়েট হতেই প্রথম বিভাগ ও স্থান নিয়ে স্থাপত্যে আমি, কেমিকৌশলে মোহাম্মদ হোসেন খালেদ ও পানি সম্পদ প্রকৌশলে আ ক ম জহির উদ্দিন চৌধুরী ডিগ্রী পেয়েছিলাম। হোসেন খালেদ দেশের একটি নামকরা ইন্সুরেন্স কোম্পানীর এমডি ও (মরহুম) ডঃ জহির উদ্দিন চৌধুরী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার ও দেশের একজন বিখ্যাত পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী প্রকৌশল কলেজ হতে পাশ করেছিলো আহমেদ আমিনুল হক যিনি এখন আমেরিকায় বসবাস করছেন। আর চট্টগ্রাম প্রকৌশল কলেজ হতে (মরহুম) মুহাম্মদ আলী আশরাফ প্রকৌশল বিদ্যায় ডিগ্রী পেয়েছিলো যিনি পরর্বতী জীবনে বহু ধারায় দেশের একজন প্রখ্যাত প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে সন্মানিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে শামীম হাসান করাচীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করলেও বাংলাদেশ হওয়ার পর বুয়েট হতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রী পেয়েছিলেন। মোহাম্মদ ঈসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স ও লন্ডনের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইলোক্ট্রনিক ও কম্পুটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রী নিয়ে বর্তমানে ঢাকায় রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করছে।
আমাদের স্কুলের সেরা ছাত্র ও “ফাস্ট বয়” সরওয়ার জাহান জামিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে লন্ডনের লীডস বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষকতা পেশা নিয়ে যুক্তরাজ্যেই থেকে যান। আরেক বন্ধু সফিক আহমেদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজিনেস ম্যানেজমেন্টসে পড়ে মাস্টার্স এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে লন্ডনের সাউথএম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েছিলেন। উনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং ও ইনফরমেশন বিভাগে অধ্যাপক ও বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। শফিক বর্তমান ব্রিট্রিশ পার্লামেন্টের প্রখ্যাত মেম্বার টিউলিপের পিতা। এছাড়াও আমাদের ক্লাসের প্রথম দশ জনের অন্যরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিলো তাদের মধ্যে প্রায় সবাই স্বস্ব বিষয়ে সবাইকে ডিংগিয়ে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী পাওয়ার কৃতিত্ব দেখান। তারমধ্যে ছিলো একই বছরের পদার্থ বিদ্যায় মাহমুদ হোসেন ( এখন আমেরিকায়), ও পরিসংখ্যান বিদ্যায় গোলাম কবির অন্যতম। আমাদের বন্ধু গোলাম কবির আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছিলেন । সকালের শিফটের আরেক বন্ধু আলতাপ হোসেন আমাদের সাথে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলো। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ভূগোলে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলো। আলতাপ কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছিলো। আমি জানি না দেশের অন্য কোন স্কুলের এরকম রেকর্ড আছে কিনা যে একই ব্যাচের এক স্কুলের শিক্ষার্থীরা এক সাথে এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে এত ভালো ফলাফল করতে পেরেছে।
আমাদের ক্লাসের অন্যান্য বন্ধুদের মধ্যে সাইফ উদ্দিন খালেদ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রী নিয়ে বেশ কিছুদিন বিদেশে কাটিয়ে চট্টগ্রামে ক্লিনিক প্রতিস্টা করে চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন।সেই আমাদের ক্লাসের একমাত্র বন্ধু যে ডাক্তার হয়েছিলো। আমাদের আরেক বন্ধু সাইফ উদ্দিন খালেদ চৌধুরী পদার্থ বিদ্যায় মাস্টার্স করেও গল্প লেখক, সাংবাদিক ও ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে প্রচুর খ্যাতি পেয়েছেন। বন্ধু বেলায়েত হোসেন সার্ভে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে বর্তমানে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। চট্টগ্রামে আবদুল মাবুদ শামসের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। ব্যাঙ্কার হিসেবে নাম করেছেন আরেক বন্ধু শাহেদুল আলম খান।আমার সবচেয়ে রাজনৈতিক সচেতন বন্ধু সরওয়ার কামাল বাস্তবজীবনে রাজনীতি না করে ব্যবসা করছেন।অন্য বন্ধুরা ইমতেয়াজ উদ্দিন আহমদ, কাইউম চৌধুরী, শোয়েব চৌধুরী আমেরিকায় থিতু হয়ে সফল জীবন যাপন করছে।

আমরা অতি সম্প্রতি দুই বন্ধুকে আমাদের জীবন হতে হারিয়েছি। তারা হলো অধ্যাপক মীর কামাল চৌধুরী ও ব্যবসা সফল ব্যক্তিত্ব শওকত ওসমানকে। বেশ কিছুদিন আগে আমাদের সহপাঠী মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ও সেকান্দর হোসেন চট্টগ্রামে ইন্তেকাল করেছিলেন। সেকান্দর ছিলো আমাদের প্রথম বন্ধু যে সবার আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে।।একটা স্কুলের সুশিক্ষা যে মানুষকে কত উপরে নিয়ে যেতে পারে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুলই তার প্রমান। এ স্কুল প্রত্যেককেই শক্ত ভিত্তি তৈরী করে দিয়েছিলো যার ফলে সবাই স্ব স্ব মেধানুযায়ী জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রতিস্টিত হতে পেরেছে।
শিক্ষকরা ছিলো সে সময়ে স্কুলের প্রান। সে সব শিক্ষকরা তাদের পুরো অস্তিত্ব নিয়ে যে ভাবে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কাজী সিরাজুল হক। তিনি অসম্ভব অমায়িক ও সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।স্কুলের সব কিছুতেই উনার তীক্ষ্ণ নজর ছিলো। আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষক ছিলেন জনাব আব্দুস সাত্তার।।নোয়াখালীর সাত্তার স্যারের কাছে আমি সারা জীবন ৠনী। উনি বিজ্ঞানের হলেও সব বিষয়ে উনার প্রচণ্ড দখল ছিলো। আমি, হোসেন খালেদ এবং আলতাফ এক সাথে উনার কাছে প্রাইভেট পড়তাম। যার ফলে উনাকে ভালো করে জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। আমাদের প্রতিটি বিষয়ে উনি নোট করে দিতেন। মাগরেবি ও মাশরেকি নামের দুইটা পুত্র সন্তান উনার ছিলো। পাকিস্তানের দুই আংশের (মাগরেবি পাকিস্তান ও মাসরেকি পাকিস্তান) নামের সাথে মিলিয়ে এদের নাম রেখেছিলেন বলে জানিয়েছিলো। এত জ্ঞানী মানুষ আমি জীবনে কমই দেখেছি।
আরেকজন বিজ্ঞান শিক্ষকের নাম ছিলো সাইয়েদুল হক। অত্যন্ত ন্ম্র ও ভদ্র ছিলেন। উনিও আমাদের ক্লাস নিতেন। সপ্তম শ্রেনীতে পড়ার সময় মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন নতুন শিক্ষক এলেন বাংলা ক্লাশ নেয়ার জন্য। শিক্ষকদের মধ্যে উনি ছিলেন সে সময়ে একমাত্র মাস্টার্স ডিগ্রী ধারী। উনার ছাত্রদের সাথে বন্ধু সুলভ ব্যবহার, সুন্দর বাচন ভংগি স্কুল জীবনের আমাদের শিক্ষকতার সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছিলেন। সাবের আহমেদ স্যার ছিলেন আমাদের ইংরেজীর শিক্ষক। উনি ছিলেন এক কথায় পান্ডিত্যের সমাহার। এত সুন্দর করে ইংরেজীর ব্যাকারন ও শব্দ চয়ন শিখিয়েছিলেন আজো ও তা কানে ভাসে। সমাজ বিদ্যা পড়াতেন মমিন উল্লাহ স্যার। পড়ানোর ফাকে ফাকে উনি সব সময় নানা রকম শ্লোক ব্যবহার করতেন। যেমন “ বাপে বানায় ভুত, মাস্টার বানায় পুত” ইত্যাদি নানা উক্তি উনি করতেন। চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী স্যার ছিলেন আমাদের আরেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব ।উনি অত্যন্ত সুন্দর হাসি স্নেহ ভড়া মন নিয়ে আমাদের শিক্ষা দিতেন।খুব রোমান্টিক মনের আধিকারী মোহাম্মদ আলী স্যার ভালো গান গাইতে পারতেন। উনার পিতৃসুলভ মধুর ও আমায়িক ব্যবহার আজো কানে বাজে।
আমাদের শারিরীক চর্চা বা ড্রিল ক্লাসের হাবিবুল্লাহ স্যার নামের এক মজার শিক্ষক ছিলেন। উনার ড্রীল ক্লাসে কোন ভুল হলেই উনি “হারামীর বাচ্চা” বলে উনার হাতের কনুই দিয়ে পিটে আঘাত করতেন। আমরা উনার বুলিকে কখনো গালি বা খারাপ অর্থে নিই নি।যেমন গালি তেমনি আদরও করতেন। একবার আমাদের ক্লাসের একজন এ রকম শাস্তি পাবার সময় পেন্টের পেছনের সেলাই খুলে গিয়েছিলো। আমরা সবাই হেসে দিয়েছিলাম। বেচারা লজ্জায় সে মুহুত্তেই বাসায় চলে গিয়েছিলো। বেশীর ভাগ শিক্ষকদের আমরা একটা ছদ্ম নামে ডাকতাম। যেমন “আম্বিয়ার বাপ” ইত্যাদি। আজ জীবনের পরিনত বয়সে এসে যখন স্কুল জীবনের স্মৃতি গুলোর দিকে তাকাই সব শিক্ষকদের মুখগুলো আজোও মানসপটে ভেসে উঠে। তাদের আন্তরিকতা, সরলতা, একাগ্রতা, নির্লোভ মানসিকতা, পেশাগত মানের বিনিময়ে আমাদের আজকের এ অবস্থান। আজকাল আমাদের সন্তানদের স্কুলের শিক্ষকদের দিকে তাকালে তার অনেক কিছুই অনুপস্থিত দেখি। কিছু কিছু শিক্ষকের মাঝে ভয়ানক বাণিজ্যিক মনোভাব লক্ষ্য করি। অথচ আমাদের জীবনের আসল কারিগর ছিলেন আমাদের স্কুলের শিক্ষকরাই।।যারা আমাদের মাঝে জীবনে এগিয়ে যাবার বীজ রোপণ করে দিয়েছে। যার উপর নির্ভর করে আমরা অকুতোভয়ে শাখা প্রশাখা মেলে বেড়ে উঠেছি। বিনম্র শ্রদ্ধা উনাদের প্রতি।
চৌধুরী ফজলে বারী/ স্থপতি পরিকল্পনাবিদ/ ফ্লোরিডা/ আমেরিকা/ ২৭
জুন ২০২২।