Old Muslimians
আমার স্বপ্নের চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুল জীবন -০১ By OLD Muslimians August 10, 2022

Mar 06, 2024

আমার স্বপ্নের চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুল জীবন -০১ By OLD Muslimians August 10, 2022

আমার স্কুল জীবন শুরু হয় ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের ফিরিঙ্গী বাজার এলাকার জে এম সেন হাই স্কুল হতে। পাঁচ বছর পেরুবার আগেই নার্সারি বা কেজি বাদ দিয়ে আমার আব্বা আম্মা সরাসরি আমাকে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি করিয়ে দেন। কারন আমার আব্বুর সরকারি চাকুরীর অবসর নেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছিলো। আর তাই উনি চাইছিলেন আমরা সব ভাইবোনেরা যতদুর সম্ভব বয়সের তুলনায় যাতে লেখাপড়ায় এগিয়ে থাকি।

সে সময় আমরা বর্তমান চট্টগ্রামের সিডিএ ভবনের রাস্তার উল্টো দিকে বিশাল একটা সরকারি বাসায় থাকতাম।সে বাসায় অনেকগুলো বড় বড় রুম ছিলো এবং সেটা ছিলো দুই তালা। আমরা দোতালায় থাকতাম। তখনো সিডিএ ভবন নির্মিত হয় নি। সিডিএর সে জায়গাটা পরীর পাহাড়ের ঢালু এলাকা ছিলো। আমার বড় ভাইরা সেখানে খেলতে যেতো। আমি বাসার লম্বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তা দেখতাম। ১৯৫৮ এর শেষের দিকে আমাদের পরিবারে হঠাৎ এক দিন ছন্দপতন হলো।আমাদের সে বাসার সিড়িটা এক রাতে প্রচন্ড শব্দে ভেংগে পড়লো।বাসার দোতালায় আমরা সবাই আটকা পড়েছিলাম। পরে দমকল বাহিনীর লোকজনরা এসে লম্বা সিড়ি দিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নীচে নামিয়ে আনলো। সে রাতেই আমরা ফিরিঙ্গীবাজারের নানার বাড়ীতে (সরদার বাড়ী) আশ্রয় নিলাম।

এর কিছুদিন পরেই নানার বাসার কাছাকাছি একটা ভাড়া বাসায় চলে গিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে আমি ফিরিঙ্গি বাজার এলাকার জে এম সেন হাই স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়তে লাগলাম। এ স্কুলে আমার রেজাল্ট ও অনেক ভালো হচ্ছিলো।এ স্কুলের স্মৃতিতে মনে আছে পালিত স্যারের ধুতি পড়া ও একটা বেত নিয়ে স্কুলে চষে বেড়ানোর কথা। উনি ছিলেন স্কুলের ডিসিপ্লিন টিচার। বন্ধুদের মধ্যে মনে পড়ে অমুল্য রত্ন দে, চন্দন বিশ্বাস ও বাবুলের ( মরহুম আবু সাঈদ দোভাষ এর পুত্র)। জানিনা ওরা এখন কে কোথায়। এক দিন আমার আম্মু জানালো যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের পাশে পিটি আই এর একটা স্কুল হয়েছে যেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে সেখানে আমাকে পড়তে হবে। যথাসময়ে একই শ্রেনীতে সেখানে ভর্তি ও হয়ে গেলাম। প্রতিদিন ফিরিঙ্গী বাজার হতে আলকরন, সিটি কলেজ পেড়িয়ে সে বয়সে একা একা পায়ে হেটে পিটি আই স্কুলে যেতাম। দূরত্ব কয়েকমাইল হবে। অথচ জীবন কত নিরাপদ ছিল। ষাট দশকে চট্টগ্রাম ছিলো একটা জীবন বান্ধব নিরাপদ শহর। রাস্তা ঘাটে বেশিরভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাফেরা করত। সে সময়ের মোটরগাড়ি বা বাস নাই বললেই হয়। ঘোড়ার গাড়ির খুব প্রচলন ছিল। কয়েক মাস ক্লাস করার পর দেখলাম সেখানে ইংরেজী ভাষার কোন পাঠাক্রম নেই। তখন আমার আম্মু আমাকে মিউনিসিপ্যাল প্রাইমারী স্কুলে নিয়ে আসেন। সে স্কুলটা বেড়া ও টিনের ছাউনি হলেও খুবই সুন্দর ফুলের বাগান ছিলো। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজী স্যারের সাথে আমার মায়ের পরিচয় থাকাতে আমি সে একই বছর সহজেই ভর্তি হয়ে গেলাম।সে স্কুলটা এখনকার মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের পাশেই ছিলো। এ স্কুলে একটা অদ্ভুদ নিয়ম চালু ছিলো। প্রত্যেক দিন স্কুল শুরু হবার আগে আমরা লাইন করে স্কুলের পাশের রাস্তায় দাড়াতাম। আর হেড মাস্টার স্কুলের গেইটে দাড়াতেন। আমাদের সবাইকে উনার পায়ে ধরে সালাম করে স্কুলে ঢুকতে হতো।

আমার আব্বা সরকারী চাকুরী ও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে ভীষন ভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কারন উনার অবসর গ্রহনের সময় ঘনিয়ে আসছিলো অথচ আমরা প্রাইমারী স্কুলের গন্ডিও পার হই নি। সে সময় আব্বার চাকুরীর বাকী ছিলো আর মাএ তিন চার বছর। এরি মধ্যে আমরা যদি অন্তত ম্যাট্রিক বা স্কুল ফাইন্যাল পাশ করি তবে অন্তত ছোটখাট চাকুরী করে দিন চালাতে পারবো তা ছিলো আব্বার ধারনা। তখন আব্বা পরিকল্পনা নিলেন যে আমাকে ক্লাস ৪ না পড়িয়ে সোজাসুজি ক্লাস ৫ এ পড়াবেন। এতে জীবনে একবছর এগিয়ে যাওয়া যাবে। একদিন আব্বা বললেন তোমাকে ক্লাস ফাইভের এডমিশন পরীক্ষা দিতে হবে একটি নাম করা স্কুলে। পাশ করলে তোমাকে আমি একটা স্যুট উপহার দেবো। আর স্কুল নিয়ে একটা লম্বা ফিরিস্তি দিলেন। নাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুল। হাজী মোহাম্মদ মোহসিন সে সময়কার অনগ্রসর মুসলিম ছাএদের শিক্ষা বিস্তারের জন্যে এ স্কুলটি প্রতিষ্টা করেন। একদিন বিকেলে আব্বা আমাকে সে স্কুল দেখাতে নিয়ে গেলেন। বিকাল বেলা। স্কুল তখন বন্ধ। কিন্তু আমরা সহজেই ভেতরে ঢুকলাম। একটা বিরাট দোতালা ভবন। আজ ও মনে পড়ে বিশাল চওড়া একটা কাঠের সিড়ি বেয়ে আমরা দোতালায় উঠেছিলাম।অনেক উচু ছাদ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে সময়কার চট্টগ্রামের সবুজ গাছে ভড়া সুন্দর দৃশ্য ও ফিরিঙ্গীবাজারের ছাদ ও কর্ণফুলি নদী দেখতে পেয়েছিলাম। তখন স্থাপত্যের অত ব্যাকারন না বুঝলেও ভবনের বিশালতা কচি মনে গভীর দাগ কেটেছিলো। আব্বা বললেন পতুগীজরা এ বিল্ডিং তৈরী করেছিলো। বিট্রিশরা এ দেশ দখল করলে তারা এটা ছেড়ে চলে যায়। একই সময় তারা ফিরিঙ্গী বাজার ও তৈরী করেছিলো। এ রকম সুন্দর ভবনে আমি পড়বো তা ভাবতেই মনটা আনন্দে ভড়ে গেলো। আব্বা আরো জানালো আগে স্কুলটা ছিলো লালদিঘী মাঠের পুর্ব পাশের পাহাড়ের উপর যেখানে এখন পুলিশের অফিস রয়েছে সেখানে। সেখানেই আমার আব্বা ১৯২৪ সালে রাউজানের নোয়াপাড়া হাই স্কুল হতে এসে এ কেন্দ্রে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

১৯৬০ সালের শুরুতেই যথা সময়ে স্কুলের ভর্তির জন্যে পরীক্ষা দিয়ে দিলাম এবং সুযোগ ও পেয়ে গেলাম। চতুর্থ শ্রেনী আর পড়া হোলো না। আমিও আমার বন্ধুদের থেকে এক বছর এগিয়ে গেলাম। আমার আব্বু খুশী হয়ে এর পুরস্কার হিসেবে একই ডিজাইনের সার্ট ও প্যান্ট উপহার দিয়েছিলো। কিন্তু মুসলিম হাই স্কুলের মূল ভবনে ঢুকতে আমার দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারন ক্লাস ফাইভ ও সিক্সের ক্লাস দুটো স্কুলের সীমানায় উত্তর পুর্বদিকে পাহাড়ের নীচু ঢালে আলাদা ছোট ভবনে ক্লাস হতো।এ স্কুলে আমার বড় ভাই চৌধুরী ফজলে আকবর ও একই নিয়মে ক্লাস ফোর না পড়েই ফাইভে পড়া শুরু করেছিলো। এস্কুলে আমার ছোটভাই চৌধুরী ফজলে মাহমুদ ও আমার দু বছর পর ভর্তি হয়েছিলো।

আমরা সব ভাইবোনেরা আমাদের নানার বাড়ীর মাঝ খানের খোলা উঠানে লেখাপড়া করতাম। সেখানে হারিকেনের আলোতে আমাদের পড়তে হতো। আমার আম্মুই লেখাপড়ার তদারকী করতো। উনি তখন এলাকার একটি সরকারি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষয়ত্রী ছিলেন।

১৯৬২ সালে আমরা ফিরিঙ্গীবাজার এলাকা হতে পাথরঘাটা নবিয়া মনজিলে থাকা শুরু করি। এ এলাকাটা হিন্দু ও খ্রীস্টান প্রধান এলাকা ছিলো। সে সময় চট্টগ্রাম শহরে এটি খুবই নামীদামী এলাকা ছিলো। দুইটি ইংরেজী মাধ্যমের মিশনারী স্কুল সেন্ট প্ল্যাসিডস ও সেন্ট স্কলার্সটিকাস স্কুল, গির্জা, ক্যাথলিক ক্লাব থাকাতে এ এলাকার দাম অনেক বেশী ছিলো। প্রচুর পেশাজীবী যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, অধ্যাপক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে থাকতো। চন্দনপুরা, আলকরণ ও ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় সে সময় অনেক বনেদি মুসলিম পরিবারের আবাস ছিলো। ষাট দশকে চট্টগ্রাম শহর মানে পাথরঘাটা, চাক্তাই, থাতুনগঞ্জ, আন্দরকিল্লাহ, চন্দনপুরা, চকবাজার, ফিরিঙ্গীবাজার, আল করন, মাদারবাড়ি ও সদরঘাট ছিলো। নাসিরাবাদে উর্দুভাষীরা ও লালখানবাজারে চট্টগ্রামের বাইরের বিশেষ করে নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষরা বসবাস করতো। লালদিঘীর পাড় ছিলো চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রবিন্দু। সে সময় থেকেই এলাকা ভিত্তিক দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিলো। যেমন খাতুনগঞ্জ ছিলো শুটকি ও চাউলের বাজার। আন্দরকিল্লাহ ছিলো বই খাতার বিক্রয় কেন্দ্র। জুবিলী রোড ছিলো হার্ডোয়ারের এলাকা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছিল শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে অনেকটা বনে অবস্থিত ছিলো।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এ পাঁচ বছর ছিল চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে আমার স্বরনীয় স্কুল জীবন। স্কুলের অনেক কিছুই আমার মনে পড়ে। আমাদের ইউনিফরম ছিলো খুবই সাধারণ। সাদা সার্ট, সাদা প্যান্ট ও মাথায় কালো ভেলভেট কাপড়ের শক্ত টুপি যা সে সময় জিন্নাহ ক্যাপ নামে পরিচিত ছিলো। সে টুপির দাম ছিলো দুই টাকা। তখনকার সময়ে অনেক। স্কুলে মুসলিম ছাড়া অন্য কোন সম্প্রদায়ের ছাত্র ভর্তি হতে পারতো না। প্রতিদিন ক্লাস শুরু হবার আগে স্কুলের সামনের খোলা জায়গায় এসেম্বলি হতো। সে মাঠের সামনে একটা উচু বেশ বড় প্ল্যাটফম ছিলো যেখানে শিক্ষকরা দাড়াতেন। প্রতিদিন হাল্কা ব্যায়াম পরিচালনা করতো আমাদের ড্রীল স্যার। কোরান তেলোয়াত হতো। দেশ ও সবার জন্য মোনাজাত হতো। প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের উদ্দ্যেশে কিছু বলতেন। পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত “পাক সার জামিন সাদ বাদ——–“ আমাদের মিলিত স্বরে উচ্চ আওয়াজ করে গাইতাম। মাঝে মাঝে “পাকিস্তান জিন্দাবাদ —পুরব বাংলা — “ নামের পাকিস্তানের একটা বাংলা সঙ্গীত ও আমরা গাইতাম। আমরা স্কুল জীবনে ছাত্রশিক্ষক সবাই পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। পাকিস্তান ছিলো আমাদের সে সময়কার স্বপ্নের দেশ। আমাদের আব্বারা কেমন করে ব্রিট্রিশ ও হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুসলিমদের জন্যে আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করেছিলো তা তারা বলতো। আমরা অবাক হয়ে সে গুলো শুনতাম। এখন যেমন নতুন প্রজন্মেরা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের কথা শুনে থাকে অবাক নয়নে। যা আমরা ওদের বলি। আসলে সব কিছুই ইতিহাসেরই অংশ। ইতিহাস ঘটনা ঘটিয়ে যায়। আমরা তার সাক্ষী হয়ে থাকি।

ষাট দশকে চট্টগ্রাম এ অঞ্চলে ঢাকার চেয়েও অনেক এগিয়ে ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি এবং পূর্ব পাকিস্তানে ছিল চট্টগ্রাম প্রধান শহর। সমস্ত ব্যবসা বানিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিলো চট্টগ্রাম। ঢাকায় গেলে আমরা কোন মফস্বল শহরে বেড়াতে এসেছি বলে মনে হতো। তখন ঢাকা নিয়ন্ত্রিত হতো একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে ( ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাষ্ট) অথচ চট্টগ্রামে তখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বড় পরিসরে ডেভেলাপমেন্ট অথারিটি (সিডিএ )। আজ ২০২২ সালে কেউই হয়ত বিশ্বাস করবে না যে এ দেশে চট্টগ্রামে অনেক কিচ্ছুরই আরম্ব হয়েছে।যেমন বহুতল শপিং সেন্টার (বিপনী বিতান), ভবনের উপরে উঠার জন্য প্রথম এস্কেলেটর এর ব্যবহার, পুশব্যাক চেয়ার সংযুক্ত আধুনিক সিনেমা হল (আল মাস /দিনার সিনেমা), প্রথম ১০ তলা ভবন(কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স ভবন) , প্রথম বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা (আগ্রাবাদ), দুই তল বিশিষ্ট রাস্তা (টাইগার পাস), ডিভাইডার সহ দুপাশ চলাচলকারি রাস্তা ইত্যাদি। সে সময় এখানে প্রচুর কলকারখানা প্রতিস্টিত হচ্ছিলো। বাংগালী ব্যবসায়ী বলতে বুঝাতো দোকানের সওদা। আর কিছু ধনী বাংগালীর আটা, মরিচ পেষার দোকান, বরফ কল, কাঠ কাটার দোকান ও নদীতে মাঝারী আকারের লঞ্চ পরিবহনের ব্যবসা ছিলো। বাকী সব ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে।।যার ফলে প্রচুর উর্দু ভাষী পরিবার চট্টগ্রামে বসবাস করতো। এদের সন্তানদের জন্যে সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে উর্দু মাধ্যমের সকালের শিফট চালু ছিলো। তাদের ছুটির পরেই আমাদের ক্লাস শুরু হতো।

চার পিরিয়ড ক্লাসের পর টিফিন ছুটি হতো। সে সময় স্কুলের নীচের তলায় মাঝের বড় কক্ষে আমরা জোহরের নামাজ আদায় করতাম। অনেক সময় স্কুলের উল্টো দিকে পরীর পাহাড় বা কোর্ট বিল্ডিং এলাকার মসজিদেও নামাজ পড়তে যেতাম। টিফিন এর সময় আমাদের স্কুল হতে টিফিন দেয়া হতো। ষাট সালের তুফানের পর আমেরিকা হতে প্রচুর রিলিফ এর গম, দুধ ও ঘি স্কুলে দেয়া হতো। তা আমরা বাসায় নিয়ে যেতাম। এছাড়া এগুলো দিয়ে স্কুলে লাড্ডু বানানো হতো যা আমরা মজা করে খেতাম। স্কুলের গেইটে এক বুড়ো ভদ্রলোক রিক্সা ভ্যানে বিভিন্ন রকমের আঁচার, লেমেঞ্চুচ, চকলেট ও নানাপ্রকার খাবার জিনিষ বিক্রি করতো। তখনকার সময়ে ষোল আনায় একটাকা হতো।বাবামা হতে বরাদ্দ হতো এক আনা বা দুই আনা। তা দিয়ে আমরা অনেক জিনিষই কিনে খেতাম। স্কুল গেইটে এক আইসক্রিমওয়ালা ছিলো যিনি বরফ কেটে লাল
বা সবুজ রং এর আইসক্রিম বিক্রি করতো।সেটাও আমার খুব প্রিয় ছিলো। শাহী আইসক্রিম নামে আইসক্রিম আমাদের সময়ে খুবই জনপ্রিয় ছিলো। এছাড়া খিরা ও আমড়াও স্কুলের সবাই কিনে খেতো। আমাদের স্কুলের পাশে ছিল রংগম সিনেমা যদিও সে সময় সেটার প্রতি কারোর বিশেষ আসক্তি চোখে পড়ে নি।একবার স্কুল থেকে বেদার নামক একটি দেশ প্রেম মূলক উর্দু ছায়াছবি ছাত্রদের বিভিন্ন সিনেমা হলে বিনামূল্যে দেখানোর ব্যবস্থা করেছিল । স্কুলের রাস্তার উল্টো দিকে সে সে সময়ের দুটি নামকরা জনপ্রিয় দোকান ছিল। একটি ছিল মিষ্টির দোকান কর এন্ড কোং আরেকটি ছিল জামা কাপড়ের দোকান যার নাম ছিল লাকি স্টোর। এখন ভাবতেও অবাক লাগে আমরা স্কুলের পানির ট্যাঙ্ক হতে বসে হাতের সাহায্যে পানি পান করতাম। তখন এতে অসুখ বিসুখের কথা চিন্তায়ও আসে নি। আবার পানির কারণে কারোর কোন অসুবিধা হয়েছে তা শুনিও নি। (——————–চলবে)

চৌধুরী ফজলে বারী/ স্থপতি পরিকল্পনাবিদ/ ফ্লোরিডা/ আমেরিকা/ ১ জুন ২০২২।

Join Our Community Now

Join Community